Wednesday, September 16, 2020

গুচ্ছ কবিতা - কমল চক্রবর্তী


 


ঈশ্বরচন্দ্র 

---------------


   

তোরা বাংলা পড়িস না

                ইংরেজি পড়

চিলেকোঠায় বন্দি, বীর বিদ্যাসাগর। 

মা বাবা, বৃদ্ধাশ্রমে, 

ঘরে ঘরে লক্ষী গনেশ 

মন্দিরে যাননি তিনি 

মাতৃপূজা, পিতৃপূজা, রামের নির্দেশ। 

গরীবের জন্য টাকা 

ট্যাকে করতো প্রবল হৈ চৈ 

সর্বদা আকাশচারী 

বাদুড় বাগানে, স্বর্গের মই। 

সাহেবেরও পূজ্য তিনি 

বিলিতি পন্ডিত মাথা নত 

বিধবা বিবাহ দিতে 

বর্ণপরিচয় বিক্রি, লক্ষ, শত শত। 

কত যে কর্মকান্ড 

বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজি, হিন্দি 

রাধাকান্তদেব রাজা 

তাঁকে মারতে হাজার ফিকির ফন্দি। 

অবশেষে কলকাতা ছাড়লেন তিনি 

দূর কারমাটাঁড়

বহু প্রসবিনী পৃথ্বী 

ঈশ্বরচন্দ্র মাত্র, একবার।।


মানুষ ঈশ্বর 

------------------



      


আমার মায়ের রক্তে, তাঁর উপস্থিতি। 

আমার বোনের রক্ত, বিশ্লেষণ শেষে, তাঁকে। 

আমার দিদা, বৃদ্ধা ঠাকুরমা, তাঁর। 

আমার রক্তেও। আমাদের, অ-আ-ক-খ-ই-ঈ ভরা 

ঈশ্বরের রক্তক্ষরণ। 


তবু আজও অত্যাচার, নিপীড়ন শব্দে, জাগে কারমাটাঁড়। 

আজও অনাথ আতুর, দুর্ভিক্ষ শুনলেই, দয়ার সাগর। 

জবুথবু মাইকেল, দরিদ্র, জীর্ণ শীর্ন মেঘনাথ, 

বধ হতে হতে, রক্তহীন, 

চাদরে মোছালেন ঘাম, মাটির ঈশ্বর 

পুটুলিতে, কবির প্রাণ, অমিত্রাক্ষর। 


তাঁর দু-খন্ড বস্ত্র, মোহনদাস শরীরে তুললেন। 

তাঁর অব্যর্থ গদ্য, রবীন্দ্রনাথ কলমে ভরলেন 

তাঁর, বিধবা বিবাহ, রাধাকান্তদেব-জর্জরিত চিতার আগুনে 

তাঁর, বালিকা বিদ্যালয়, মিস কার্পেন্টার, বেথুন হ্যাভেল, 

গীর্জায়, ঢং ঢং ঢং। 

তাঁর, বাদুড়বাগান, কারমাটাঁড়, মর্তে, কাশী, 

বৃন্দাবন, হরিদ্বার।

 

তিনি ঈশ্বরচন্দ্র নন, বিদ্যাসাগর নন, দয়ারসাগর নন, 

লক্ষ বছর যত্নে, মা পৃথিবী, জন্ম দিয়েছেন, একবার। 

একজন " মানুষ ঈশ্বর "। বিদ্যাসাগর।


( ছবি-ইন্টারনেট ) 

1 comment:

  1. দ্বিতীয় লেখাটি খুব ভালো।

    ReplyDelete

কথামুখ

 অপুর্ব  জীববৈচিত্র্য ভরা আমাদের এই পৃথিবী। কিন্তু স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের জন্য, তাদের অমানবিক ও অবিবেচকের মতো বিভিন্ন কার্মকান্ডের জন্য...