Wednesday, September 16, 2020

গল্প - মৌমিতা ঘোষ


 ঈর্ষা

----------


"মা আআআ।মা।"


"বল।"


"আজ আমি খুব এক্সাইটেড । তোমাকে কিছু বলার আছে।"


"বলে ফেল। কোন বন্ধু নিশ্চয়ই কোন‌ গিফট দিয়েছে? দাঁড়া, লেট মি গেজ, তোর প্রিয় সিলভার জুয়েলারি? কে দিল? রুম্পা?"


"না। তুমি আজ দশে দুই পেলে।এই দেখো।‌বাঁ হাতের অনামিকা দেখায় অদিতি, মাকে।তারপর গলা জড়িয়ে ধরে। চোখ বুজে বলে , খুব খুশি আজ আমি।"


"কে দিল, শুনি?" 


"তুমি না বলতে অরিন্দম কোনদিন আমাকে পছন্দ করবে না। আমিই ক্যাবলার মতো ওর পথ চেয়ে থাকবো সারাজীবন।‌"


অরিন্দম দিয়েছে? Am I to believe it?


"হ্যাঁ মা। আর ও বলেছে এতদিন ধরে ও নাকি আমার জন্য অপেক্ষা করত, কবে আমি বলব।‌আজ আর না পেরে সব বন্ধুদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে নায়কের মতো ভঙ্গিতে আঙটি পরিয়েছে।"


"আর তুমি দাঁত বের করে পরে নিলে? লজ্জা করলো না?"


"কেন? তুমি ই তো বলতে অরিন্দমের মতো ছেলে হয়না, ওর মতো ঝকঝকে, সাকসেসফুল ছেলে আমাকে কোনদিন পছন্দই করবেনা। "


"বলতাম তো। কিন্তু এতদিন কিছুই বললোনা,আর আজ এসে সটান আঙটি পরিয়ে দিল? তোর একবার ও সন্দেহ হলনা। নির্ঘাৎ ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।"


"কী বলছ তুমি? ওর চোখে কী প্রচন্ড আবেগ ছিল,সততা ছিল!"


"ও, বাবা! তুই এত কিছু দেখেও ফেললি। আসলে প্রেমে তুই অন্ধ হয়ে গেছিস।"


"ও অসৎ হলে সবার সামনে আঙটি পরালো কেন?"


"দেখ গে খুঁজে, কোন চ্যালেঞ্জ নিয়েছে নির্ঘাত কোন বন্ধুর সঙ্গে । তাই এসব নাটক। কাল দেখবি হয়তো তোর সঙ্গে শুয়ে পেট বাজিয়ে চলে যাবে।"


"মা! ছিঃ ছিঃ। তোমার এরকম ভাষা কবে থেকে হল? যে অরিন্দম তোমার চোখে এত আদর্শ ছেলে ছিলো, হঠাৎ শুধু assumption এর ভিত্তিতে কী করে তাকে এত খারাপ বলছ?"


"দুনিয়া আমি চিনি মাম। আজকাল দেখিস না ছেলেরা মেয়েদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ছবি বা ভিডিও বেচে দেয় ইন্টারনেটে? ওরকম মতলব যে ওর নেই কী করে বুঝবো? দাঁড়াও, আমিই ফোন করছি ওকে। হ্যালো অরিন্দম, কাকিমা বলছি, অদিতির মা। তুমি অবশ্যই কাল এসে আমার থেকে আঙটিটা ফেরত নিয়ে যাবে।না। আমার মেয়ে যার তার থেকে কোন উপহার হাত পেতে নেবে, সেটা ওর বাবা আর আমার দুজনের কারোরই পছন্দ নয়। কথা বাড়িও না। বাই।"


"মা। This is too much. তুমি হঠাৎ এরকম বিহেভ করছ কেন? কেন আমার সবচেয়ে ভালো দিনটা নষ্ট করে দিলে তুমি?"

চোখে জল চলে এলো অদিতির।


"আমি নষ্ট করেছি? তুমি তোমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চলেছ। তোমার মধ্যে কী এমন আছে যে অরিন্দমের মতো ছেলে তোমাকে ভালোবাসবে , বিয়ে করবে?"


"কেন? আমার রেজাল্ট ভালো, আমাকে দেখতেও ভালো, ভালো গানও গাই।"


"মাম, তোমার রেজাল্ট অরিন্দমের ধারে কাছেও যায়না।আর দেখতে? "


মা মুখটা ব্যাকায়। 

রক্ত চড়ে যায় অদিতির মাথায়। "তোমার সামনে যদি না ওর সঙ্গে বিয়ে করে এসে দাঁড়াই তো আমার নাম অদিতি না।"


অদিতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।


অনেক ভোরে খুট করে একটা আওয়াজ পায় অদিতি । ঘুমের ঘোরে ঝাপসা চোখে দেখে মা কী যেন হাতড়াচ্ছে ওর ড্রেসিং টেবিলে, ড্রয়ারে। কিছুক্ষণ বাদে মা বেরিয়ে গেল। অদিতি পিছন‌ পিছন পা টিপে টিপে গিয়ে দেখে মা ছাতে বসে ওর আঙটিটা হাতে পরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। 


"এরকম আঙটি আমার হাতেই মানায়। ওরকম একটা ঝকঝকে ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, আর বাবা মা এরকম একটা শান্ত ,ন্যালাক্যাবলা লোকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিল। কোনদিন পাশে নিয়ে বেরোতে ভালো লাগেনি।ধুর, ধুর। আমার কপালেই একটা স্মার্ট ছেলে জুটলো না, আর অদিতির জুটে যাবে? হয় নাকি? বাচ্চা মেয়ে, ওকে ছেলেটা মিথ্যে ভোলাচ্ছে। আমি এটা হতেই দেবোনা।"

 আবার নিজের আঙটি পরা হাতের দিকে তাকায় মা।‌নিজে নিজেই হাসে।‌কেমন একটা হিংস্র হাসি।


মা এত ভোরে একটা লাল রঙের সিল্ক পরেছে। খোলা চুলে, রক্ত বসনে, চোখের তারায় স্পষ্ট এক পিশাচিনীকে দেখতে পেল অদিতি।



অলংকরণ- কার্তিক ঢক্

1 comment:

  1. কি সাংঘাতিক! মানুষ কত রকম হয়। খুব ভালো লাগলো মৌমিতা

    ReplyDelete

কথামুখ

 অপুর্ব  জীববৈচিত্র্য ভরা আমাদের এই পৃথিবী। কিন্তু স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের জন্য, তাদের অমানবিক ও অবিবেচকের মতো বিভিন্ন কার্মকান্ডের জন্য...